Saturday, December 11, 2010

শান্তিতেই হিডকো অভিযান বিজেপি-র

"HIDCO GHERAO" BY BJP (PHOTO: BARTAMAN PATRIKA)
কোনও হাঙ্গামা ছাড়াই মিটে গেল বিজেপি-র হিডকো অভিযান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৩০ নভেম্বর যথাক্রমে ধর্মতলা এবং ফিয়ার্স লেনে বিজেপি-র বিক্ষোভ কর্মসূচিকে যে ভাবে হিংসাত্মক হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছে, শুক্রবার নিউটাউনের হিডকো দফতরের অদূরে তার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি।
রাজ্য রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার জন্যই বিধায়ক-শূন্য এই দল বর্তমানে হিংসাত্মক আন্দোলনের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু এ দিন তাদের কর্মসূচি বিনা অশান্তিতে মিটে যাওয়ায় রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ মনে করছে, বিজেপি সাময়িক ভাবে ওই কৌশল থেকে সরে দাঁড়াল। তবে অন্য অংশের ব্যাখ্যা, এ দিন নিউটাউনের যে এলাকায় বিজেপি-র কর্মসূচি ছিল, তা এতই নির্জন যে, সেখানে হাঙ্গামা বাধালে জনতার মধ্যে বিশেষ ‘প্রভাব’ পড়ত না। সেই কারণেই তারা এ দিন ওই রাস্তায় হাঁটেনি।
এ দিন বিজেপি-র বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল রাজারহাটের জমি-কাণ্ড নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে। তাদের অভিযোগ, রাজারহাট- নিউটাউনে কৃষিজমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও অন্যান্য প্রকল্প তৈরি পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ায় সিপিএম এবং তৃণমূল সমান ভাবে জড়িত। এবং সে জন্যই তৃণমূল এত দিন রাজারহাট নিয়ে নিশ্চুপ ছিল। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পর ভোটে সাফল্য পেয়ে তৃণমূল নেত্রী বুঝেছেন, এ রাজ্যে জমি বিষয়টা ভাল চলছে। আর কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক হয়ে মূল্যবৃদ্ধি বা তাদের একের পর এক কেলেঙ্কারি নিয়েও তাঁর পক্ষে কার্যকরী প্রতিবাদ করা সম্ভব নয়। তাই তিনি সদলে রাজারহাট-নিউটাউন জমি-কাণ্ড নিয়ে আন্দোলনের নাটক করছেন।” যার প্রতিবাদে রাহুল এ দিন তাঁদের সভা-সংলগ্ন একখণ্ড জমিতে গরু-লাঙল সহযোগে ‘প্রতীকী’ ধান চাষ করেছেন।
বস্তুত, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের মতো রাজারহাট আন্দোলনের ফসলও তৃণমূল একাই ঘরে তুলুক, তা বিজেপি চায় না। ওই ফসলে ভাগ বসানোর উদ্দেশ্যেই তারা দু’টি কৌশল নিয়েছে। এক, রাজারহাটের জমিহারাদের প্রতি তাদের দরদই ‘আসল’ এবং বাকিদেরটা ‘নকল’—এটা দেখানো। দুই, রাজারহাট এবং সমগ্র জমি অধিগ্রহণ বিতর্কে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের ‘অসারতা’ প্রমাণ করা। যে কারণে এ দিন বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায় সিপিএমের চেয়ে তৃণমূলকেই বেশি বিঁধেছেন। তাঁর প্রথম প্রশ্ন, “অধিগৃহীত জমিতে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। মানুষ থাকতে শুরু করেছেন। এত দিন পরে তৃণমূল নেত্রী সরব হলেন কেন? তিনি কি চান, ওই বাড়িগুলি ভেঙে জমি অনিচ্ছুক কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে?” এই প্রেক্ষিতেই তথাগতবাবু জানান, তাঁরা জমি অধিগ্রহণ বা নগরায়নের বিরোধী নন।
তাঁর কথায়, “ধরা যাক, কারখানা, রেলপথ বা রাস্তার জন্য এক লপ্তে কিছুটা জমি দরকার। জমি দিতে কেউ রাজি হলেন। কেউ হলেন না। সে ক্ষেত্রে অনিচ্ছুকদের অংশ বাঁচিয়ে কি সাপের মতো এঁকেবেঁকে কারখানা বা রেললাইন বা রাস্তা হবে?” মমতার প্রতি তথাগতবাবুর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কটাক্ষ, “জমিদাতারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না জমি অধিগ্রহণের পুরনো আইনের জন্য। আর সেই আইন সংশোধন আটকে আছে মমতার জন্য। তা ছাড়া, উনি ওঁর রেলে জমিদাতাদের চাকরি দিয়ে নজির গড়ুন না! সকলে না হয় ওঁকে দেখেই মডেলটা শিখবে!”
আনন্দবাজার পত্রিকা ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪১৭ শনিবার ১১ ডিসেম্বর ২০১০

No comments:

Post a Comment